আপনি একজন ছোট ব্যবসায়ী। এলাকার স্থানীয় লোকজনদের নিয়ে আপনার ব্যবসা। আপনি হয়তো সেলুন, জিম, বিউটি পার্লার, কোচিং সেন্টারের মালিক। অথবা বিভিন্ন পণ্য তৈরি করছেন, যেমন, বলপেন, হাণ্ডি ক্রাফট, টিশার্ট, সালওয়ার কামিজ, মিষ্টি, সফটওয়্যার, ওয়েবসাইট তৈরি করেন। ব্যবসার ধরণ যেটাই হোক না কেন, একটি ছোট ব্যবসা চালানোর জন্য বিপণন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ভাল বিপণন পরিকল্পনা (Marketing Plan) আপনার ব্যবসার ক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে লক্ষ্যবদ্ধ কাস্টমারদের (Target Customer) আকর্ষণ করবে এবং আপনার ব্র্যান্ডের সচেতনতা (Brand Awareness) বৃদ্ধি করবে।
আপনি নিম্নলিখিত কয়েকটি উপায় ব্যবহার করতে পারেন ছোট ব্যবসার বিপণনের জন্য:
টার্গেট কাস্টমার
আপনার পণ্য ও সেবা কারা কিনবে? কাস্টমারদের ধরণ কিরকম হবে? তাঁরা কি পছন্দ করে? তাঁদের Interests, tastes, Preferences ভালভাবে চিন্তা করুন। তাঁদের জীবন যাপন পদ্ধতি কেমন? কি ধরণের চাকরী ও আয় করে? লেখা পড়া কতটুকু? ইত্যাদি ছোট খাটো বিষয়গুলো ভালো করে চিন্তা ভাবনা করে ঠিক করুন কি ধরণের কাস্টমার আপনার পণ্য ও সেবা কিনবে। টার্গেট কাস্টমার ঠিক হলে আপনার জন্য বিপণন পরিকল্পনা (marketing strategies) ঠিক করা অনেক সহজ হয়ে যাবে। বিবিন্ন বিজ্ঞাপনে ও বিপণন কাম্পাইনে (Marketing Campaign) আপনি কাস্টমারদেরকে যে মেসেজ (Marketing Message) দিতে চান তা লেখা আপনার জন্য অনেক সহজ হয়ে যাবে।
বিপণন পরিকল্পনা
একটি কাগজে লিখুন – আপনার ব্যবসার লক্ষ কি হবে, কি ধরণের Tactics ব্যবহার করবেন কাস্টমারের কাছে পৌঁছর জন্য, কারা আপনার কাস্টমার হবে, তাঁদের কাছে কিভাবে বিক্রি করবেন, কি ধরণের চ্যানেলের মাধ্যমে কাস্টমারের কাছে পণ্য ও সেবা পৌঁছে দেয়া হবে, এসব করার জন্য সারা বছর অথবা একটি নির্দিষ্ট সময়ে কিরকম খরচ হবে তাঁর একটি বাজেট ঠিক করুন।
সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞাপন
স্থানীয় পত্রিকায় (যদি থাকে) সংক্ষিপ্ত বিজ্ঞাপন দিন। ঢাকার বাইরে স্থানীয় পত্রিকার এখনো প্রচলন আছে। আপনার পণ্যের সার্বিক বৈশিষ্ট্য এবং উপকারিতা ভালোভাবে প্রকাশ করুন যা গ্রাহকদের আকর্ষণ করবে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবার পর আপনাকে লাভের পরিমাণ হিসাব করে বের করতে হবে। বিজ্ঞাপনের পেছনে কত টাকা খরচ করলেন এবং এর বিনিময়ে কয়টি কাস্টমর পেলেন। এই হিসাবটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি লাভজনক না হয়, তাহলে বিজ্ঞাপন দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। ব্র্যান্ডের সচেতনতা (Brand Awareness) বৃদ্ধির জন্য অনেকে বিজ্ঞাপন চালিয়ে যান। কিন্তু সাবধান। বিপণনের জন্য যে খরচ করা হয় তাকে Sunk Cost বলে। এর মানে হল এই টাকা অন্য কোনভাবে ফেরত পাবার কোন সম্ভাবনা নাই।
সামাজিক মাধ্যমে মার্কেটিং
সামাজিক মাধ্যম আপনার ব্যবসার জন্য একটি শক্তিশালী বিপণন প্ল্যাটফর্ম। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে আপনার ব্যবসার পণ্য বা পরিষেবার বিজ্ঞাপন দিন। আপনি ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, টুইটার এবং ইউটিউবে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারেন।বাংলাদেশে টুইটার বেশী জনপ্রিয় মাধ্যম নয়।আপনার কাস্টমার কোনটিতে বেশী সময় ব্যয় করে চিন্তা করে বের করুন। সেই অনুযায়ী কাস্টমারদেরকে Target করে তাঁদের সাথে Interact করুন। কাস্টমারদের সাথে যতটা পারেন involve হয়ে যান। মার্কেটিং ক্যাম্পেইন চালিয়ে যান এবং মার্কেটিং মেট্রিক্স (Metrix) ব্যবহার করে আপনার সামাজিক মাধ্যমে প্রচারণা নিয়ন্ত্রণ করুন। এই প্ল্যাটফর্মগুলি আপনার পণ্যগুলির লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করবে।
ইনফ্লুএন্সারদের (Influencer) ব্যবহার
বাংলাদেশে Facebook/Yutube এ বেশ কিছু ইনফ্লুএন্সার তৈরি হয়েছে যাদেরকে অনেকে অনুসরণ করে। তাঁদের মাধ্যমে আপনার পণ্যের বিপণন করুন। এতে বিক্রি আশা করি বাড়বে। ব্র্যান্ডের সচেতনতা (Brand Awareness) কিছুটা হলেও বৃদ্ধি পাবে। লক্ষ রাখতে যে কোন ইনফ্লুএন্সার ব্যবহার করা ঠিক হবে না। এতে আপনার Debranding হয়ে যেতে পারেন। কাস্টমারকে ভুল মেসেজ দেয়া যাবে না।
কাস্টমার রেফারেল ও রিভিউ
যেসব কাস্টমার আপনার কাছ থেকে পণ্য কিনে সন্তুষ্ট হয়েছে তাঁদেরকে বলুন আপনার পণ্য তাঁদের বন্ধু বান্ধব ও তাঁদের পরিবারকে রেফার করার জন্য। কাস্টমার রেফারেল ও রিভিউর জন্য তাঁদেরকে Gift দিয়ে উৎসাহিত করতে পারেন। ভালো রিভিউ ও ওয়ার্ড অফ মাউথ (Word of Mouth) আপনার সুনাম নিশ্চিতভাবে বৃদ্ধি করবে।
স্থানীয় সংস্থাগুলোর সহযোগিতা
ছোট ব্যবসা চালানোর জন্য স্থানীয় সম্পর্ক (Local Relationship) গঠন খুবই উপকারী। আপনি স্থানীয় সংস্থাগুলোর (Local Institutions) সাথে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি করুন। স্থানীয় স্কুল, কলেজ, অ্যাসোসিয়েশান, ক্লাব, সরকারী সংস্থা, ইত্যাদির সাথে সম্পর্ক তৈরি করুন। এটি স্থানীয় গ্রাহকদের আপনার সাথে সংযোগ স্থাপন করবে এবং ব্র্যান্ডের সচেতনতা (Brand Awareness) বৃদ্ধি করতে সাহায্য করবে। স্থানীয় কমিউনিটিতে নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে পারেন যাতে আপনার ব্যবসা সম্পর্কে লোকজন বিশ্বাস করে এবং আপনার পণ্য বা পরিষেবা কেনার জন্য আগ্রহী হয়। আপনার ব্যবসার জন্য এটি নির্ভরযোগ্য এবং প্রভাবশালী মাধ্যম হতে পারে।
স্থানীয় মেলা ও বাজারে অংশগ্রহণ
আপনি স্থানীয় মেলা, বাজার বা ইভেন্টে অংশগ্রহণ করতে পারেন এবং আপনার পণ্যের ডেমোনস্ট্রেশন করতে পারেন। এটি আপনাকে স্থানীয় গ্রাহকদের সঙ্গে সাম্পর্ক স্থাপন করতে এবং আপনার ব্র্যান্ডের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে অনেক সাহায্য করবে। আপনি নিজেকে ও আপনার পণ্যকে স্থানীয় মেলা ও বাজারে প্রকাশ করতে পারবেন এবং লোকজনের কাছে আপনার ব্র্যান্ড পরিচয় গড়ে তুলতে পারেন।
মূল্য প্রদর্শন
ছোট ব্যবসায় প্রতিযোগিতামূলক মার্কেটে মূল্য প্রদর্শন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পণ্যগুলির উচ্চ মানের পাশাপাশি সার্বিক মূল্য প্রদান করতে পারেন। আপনি উচ্চ মানের পণ্য এবং পরিষেবা দিতে পারেন যাতে গ্রাহকদের মধ্যে আপনার ব্র্যান্ডের সম্পর্কে ভরসা সৃষ্টি হয়।
ফলাফল (Result) চেক করুন
এই পর্যন্ত যতগুলো বিপণন পদ্ধতি নিয়ে আপনি কাজ করেছেন তাঁদের Performance চেক করুন। Google Analytics এর মাধ্যমে আপনার ওয়েবসাইট ট্রাফিক, Conversion Rate, user behavior এসব চেক করে আপনি সহজে সিধান্ত নিতে পারবেন কোন বিপণন পদ্ধতি আপনার ব্যবসার জন্য লাভজনক। মাঝে মাঝে Google, Youtube, Facebook অথবা পত্রিকার বিজনেসের পাতা পড়ে কিছু বিষয় বোঝার চেষ্টা করুন, যেমন, industry trends, consumer preferences, and emerging marketing channels। ব্যবসাকে সেই অনুযায়ী Update করে ফেলুন। কাস্টমার Feedback নেয়ার চেষ্টা করুন। কাস্টমারকে জিজ্ঞাসা করুন তাঁরা কি ভাবছে আপনার ব্যবসার বিষয়। সেই অনুযায়ী বিপণন পরিকল্পনা, বিপণন পদ্ধতি, Tactics গুলো নিয়মিতভাবে পরিবর্তন করলে ভালো সুফল পাবেন। মনে রাখবেন, কাস্টমারকে ঠিকমত বুঝতে পারাই হল ব্যবসার সাফল্যের মুল চাবি কাঠি।
উপরোক্ত উপায়গুলি পালন করে ছোট ব্যবসার বিপণন করতে পারেন। সঠিক প্রচার এবং প্রমোশনের মাধ্যমে আপনি আপনার ব্যবসায় সম্ভাব্য গ্রাহকদের আকর্ষণ করতে সক্ষম হবেন।